লিটন উদ্দিন সরকার ,টঙ্গী-গাজীপুর
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস বা কোভিড ১৯ এর বিস্তার রোধে গাজীপুরে ঘোষিত লকডাউন শুক্রবার থেকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য জেলার আইনশৃংখলা বাহিনী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষে গাজীপুরে দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিবের সাথে জেলার জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলার সমন্বয়ক ও দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব (বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক) সত্যব্রত সাহা।
সভায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন পিপিএম (বার) বিপিএম (বার), গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিল আহমেদ, জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার (পিপিএম) এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় করোনা মোকাবেলায় জেলায় ইতিপূর্বে গৃহীত ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু নাসার উদ্দিন।
সভা শেষে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগিত করেন। এসময় তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধকল্পে গত ১১ এপ্রিল জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গাজীপুর জেলাকে লকডাউনের যে ঘোষণা করেছিলেন, তা শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। এসময় জেলার বাইরে থেকে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জেলার ভিতর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। এছাড়া জরুরী খাদ্য ও ঔষধ ক্রয় করার জন্য এক পরিবারের একজন একবার ঘরের বাইরে আসতে পারবেন। বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আইন শৃংখলা বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার লক্ষে নিয়োজিত সেনা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু নাসার উদ্দিন জানান, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, জেলার সকল সড়কে প্যাডল রিকসা, অটোরিক্সা ইজি বাইক ইত্যাদি চলাচল বন্ধ থাকবে। আগামী ৫ মে সাধারণ ছুটি শেষ হওয়া পর্যন্ত জেলার সকল তৈরী পোশাক শিল্পগুলো যাতে বন্ধ রাখা যায় সে লক্ষে সরকারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হবে। যে সকল তৈরী পোশাক কারখানা এখনো শ্রমিকদের বকেয়া বেতন প্রদান করেনি, সে সকল কারখানা যাতে দ্রুত বকেয়া বেতন প্রদান করে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ডিজিটাল পদ্ধতিতে জেলা ত্রাণ বিতরণ করা হবে।
গত ১১ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম তরিকুল ইসলাম গাজীপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন।
গণ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভিন্ন জেলা হতে পাশবর্তী জেলায় গমণের উদ্দেশ্যে ট্রানজিট হিসেবে জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহার ব্যতীত জেলা-উপজেলার যে কোন সীমানা দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। নৌপথেও এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এই সময়ে সব ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমায়েত, গণপরিবহন এবং দিন রাতে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরী পরিষেবা, চিকিৎসা সেবা, কৃষিপণ্য ও খাদ্য দ্রব্য সরবরাহ, সংগ্রহ, উৎপাদন ও পরিবহন ইত্যাদি এর আওতা বহির্ভূত থাকবে।